আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি তেল আমদানির অন্যতম পথ হরমুজ প্রণালী নিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘণীভূত হয়েছে। ইরান বন্ধ করে দিতে পারে হরমুজ প্রণালী। এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে ভারত। সমূহ বিপদের আশঙ্কা নয়াদিল্লির। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এ দেশে জ্বালানির দাম, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ-সহ সর্বক্ষেত্রেই প্রভাব পড়তে পারে।

হরমুজ প্রণালী উত্তরে ইরান এবং দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (ইউএই)-এর মধ্যে অবস্থিত। এটি পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগরের সঙ্গে এবং পরে আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। হরমুজ প্রণালী সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থান, মাত্র ২১ মাইল (৩৪ কিলোমিটার) প্রশস্ত। তবে, জাহাজের জন্য প্রকৃত নাব্য চ্যানেলটি চারদিকে দিকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত। যার জেরে এই প্রণালী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। 

হরমুজ প্রণালীর কাছাকাছি অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলির মধ্যে রয়েছে: ইরানের বন্দর আব্বাস - একটি প্রধান নৌ ও বাণিজ্যিক বন্দর।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ বন্দর - একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল সংরক্ষণ এবং জাহাজীকরণ কেন্দ্র। ওমানের সোহার বন্দর - বাণিজ্য এবং জাহাজীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। কাতারের রাস লাফান - তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর
এই জলপথটি বেশিরভাগ উপসাগরীয় দেশ থেকে তেল ও গ্যাস রপ্তানির জন্য একমাত্র সমুদ্র পথ, যা এটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

হরমুজ প্রণালী কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বের প্রায় পাঁচভাগের একভাগ তেল, প্রতিদিন ১ কোটি ৭০ লক্ষ ব্যারেলেরও বেশি জ্বালানি হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। এটি সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো প্রধান উৎপাদক দেশগুলি থেকে জ্বালানি রপ্তানির জন্য প্রধান জাহাজ পথ।

মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (EIA) অনুসারে, বিশ্বের তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ (প্রতিদিন প্রায় ২০.৯ মিলিয়ন ব্যারেল) এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়ে যায়। এই পরিমাণ তেলের প্রায় ৮৩ শতাংশই এশিয় দেশের বাজারের জন্য নির্ধারিত। এই প্রণালী দিয়ে তেল ও গ্যাসের অবাধ যাতায়াতের ফলে যেকোনও হুমকিই বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করে।

ভারতের জন্য হরমুজ প্রণালী কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের ৮৫ শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয় এই প্রণালী দিয়ে। ফলে এই সমুদ্রপথ বন্ধ হলে ভারতের জন্য খুবই খারাপ হবে। ইরাক, সৌদি আরব, আরব আমিরশাহী থেকে আসা তেলের সাপ্লাই বাধাপ্রাপ্ত হবে। অন্য দেশ থেকে তেল আমদানি করতে হতে পারে। যার জেরে তেলের দাম বাড়তে পারে। প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতিতে। 

তেল বাদ দিয়েও, ভারত এই পথেই বিশেষ করে কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে। যদি সরবরাহ বিলম্বিত হয়, তাহলে এটি ভারতের গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং উৎপাদন শিল্পের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত উপসাগরীয় দেশগুলিতে যন্ত্রপাতি, বস্ত্র, গয়েনা এবং রাসায়নিকও রপ্তানি করে। হরমুজ প্রণালী দিয়েই রপ্তানির পণ্য যায়। কিন্তু, এই সমুদ্রপথ বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরও চরম ক্ষতি হতে পারে। 

ভারতের কাছে বিকল্প? 
মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও আফ্রিকার বিভইন্ন দেশ, আমেরিকা-সহ অন্যান্য দেশ থেকেও বারত তেল কেনে। তবে পরিমাণে তা অনেকটাই কম। গত এপ্রিলে ভারত ১২ শতাংশ তেল আমদানি করেছিল আফ্রিকার দেশগুলি থেকে। মে মাসে সেটা কমিয়ে আনা হয় মাত্র ৫ শতাংশে। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে বিকল্প হিসেবে আফ্রিকার দেশগুলি থেকে তেল কেনার বিষয়ে বিবেচনা করবে ভারত।তবে এতে ভারতে তেলের ঘাটতি পূরণ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। 

বিভিন্ন সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানিয়েছে যে, বর্তমানে দেশে ৭৪ দিনের মতো তেল মজুত রয়েছে। কৌশলগতভাবে তেল মজুত রয়েছে ৯.৫ দিনের। তবে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে চলললে ভারতে .তেল আমদানি বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে প্রমাদ গুনছে নয়াদিল্লি।